SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বাংলা সাহিত্য - কবিতা | NCTB BOOK

তোদের অসুর নৃত্য ... ঠা ঠা হাসি ... ফিরিয়ে দিয়েছি

তোদের রক্তাক্ত হাত মুচড়ে দিয়েছি নয় মাসে

চির কবিতার দেশ ... ভেবেছিলি অস্ত্ৰে মাত হবে

বাঙালি অনার্য জাতি, খর্বদেহ ... ভাত খায়, ভীতু

কিন্তু কী ঘটল শেষে, কে দেখাল মহা প্রতিরোধ

অ আ ক খ বর্ণমালা পথে পথে তেপান্তরে ঘুরে

উদ্বাস্তু আশ্রয়হীন ... পোড়াগ্রাম ... মাতৃ অপমানে

কার রক্ত ছুঁয়ে শেষে হয়ে গেল ঘৃণার কার্তুজ।


সাহসী জননী বাংলা, বুকে চাপা মৃতের আগুন

রাত জাগে পাহারায় ... বুড়িগঙ্গা পদ্মা নদীতীর

ডাকাত পড়েছে গ্রামে, মধ্যরাতে হানাদার আসে

ভাই বোন কে ঘুমায়? জাগে, নীলকমলেরা জাগে ।

গ্রেনেড উঠেছে হাতে কবিতার হাতে রাইফেল

এবার বাঘের থাবা, ভোজ হবে আজ প্ৰতিশোধে

যার সঙ্গে যে রকম, সে রকম খেলবে বাঙালি

খেলেছি, মেরেছি সুখে ... কান কেটে দিয়েছি তোদের।
এসেছি আবার ফিরে রাতজাগা নির্বাসন শেষে

এসেছি জননী বঙ্গে স্বাধীনতা উড়িয়ে উড়িয়ে ...

Content added By
নির্ভীক গ্রহরীদের
সাহসী অভিযাত্রীদের
সহলয় মানুষদের
মুক্তিযোধাগণ

কামাল চৌধুরী ১৯৫৭ সালের ২৮শে জানুয়ারি কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বিজয়করা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা আহমদ হোসেন চৌধুরী মাতা বেগম তাহেরা হোসেন। ১৯৭৩ সালে তিনি নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল হাইস্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৭৫ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরবর্তীকালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে সম্মানসহ স্নাতক স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ২০০৬ সালে তিনি গারো জনগোষ্ঠীর মাতৃসূত্রীয় আবাস প্রথা নিয়ে গবেষণা করে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। পেশায় তিনি সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। তাঁর কবিতা বাঙালির আবহমান জীবনচর্যা, সংগ্রাম মানবীয় বোধের উৎসারণ, সেই সঙ্গে শিল্পিত প্রকরণের উজ্জ্বল প্রকাশ তিনি শব্দ ছন্দ সচেতন এবং নিরীক্ষাপ্রবণ কবি। বাংলা কবিতায় পরিসুত ধারার অন্যতম প্রধান প্রতিনিধি। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্য : মিছিলের সমান বয়সী, টানাপোড়েনের দিন, এই পথ এই কোলাহল, এসেছি নিজের ভোরে, ধূলি সাগর দৃশ্য, হে মাটি পৃথিবীপুত্র, পান্থশালার ঘোড়া ইত্যাদি। কিশোর কবিতা : আপন মনের পাঠশালাতে। সাহিত্যে তাৎপর্যময় অবদানের জন্য তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ অনেক পুরস্কার সম্মাননায় ভূষিত হন।

Content added By

অসুর নৃত্য – হিন্দু পুরাণ মতে অসুর হলো দেবতাদের শত্রু । দৈত্য বা দানব । অসুর নৃত্য হলো দানবদের নৃত্য। এখানে অসুর নৃত্য বলতে কবি বাংলাদেশে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দানবীয় ধ্বংসলীলাকে বুঝিয়েছেন;

রক্তাক্ত হাত মুচড়ে দিয়েছি – পাকিস্তানি বাহিনী বাঙালিদের রক্তে তাদের হাত রঞ্জিত করেছিল। প্রতিশোধ হিসেবে কবি সেই কলঙ্কিত হাতকে মুচড়ে দেওয়ার কথা বলেছেন।

চির কবিতার দেশ – বাংলা ও বাঙালি জাতি কবিতার জন্য বিখ্যাত। এদেশের আছে কবিতার সমৃদ্ধ এক ঐতিহ্য। চির কবিতার দেশ বলতে কবি বাংলাদেশকে বুঝিয়েছেন।

বাঙালি অনার্য জাতি – আর্যগণ ভারতে আসার বহু পূর্ব থেকেই অনেক জাতির লোক এদেশে বসবাস করতেন। তারা অনার্য হিসেবে পরিচিত। আর্যগণ অনার্যদের ঘৃণার চোখে দেখতেন, অত্যাচার-অবিচার করতেন। কবি বাঙালিদেরও অনার্য হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন । কিন্তু বাঙালিরা যে ভীতু নয়, দুর্বল বা কাপুরুষ নয়, বরং বীরের জাতি কবি তাদের এই ঐতিহাসিক ও সাহসী পরিচয়ের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন।

অ আ ক খ বর্ণমালা পথে পথে— বাঙালির বীরত্ব আর শৌর্যের সুদীর্ঘ ইতিহাস আছে । সেই ইতিহাসের তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যায় ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন। ভাষার জন্য বাঙালির আত্মত্যাগের সুমহান প্রেরণার পথ ধরে বাঙালি জাতি এগিয়ে এসেছে মুক্তির পথে, স্বাধীনতার পথে। কবিতার এই অংশে কবি আমাদের ভাষা প্রেমের উদ্দীপনাময় চিত্রকল্প নির্মাণ করেছেন।

ঘৃণার কার্তুজ – ‘কার্তুজ' শব্দটি এসেছে 'কারটিজ' শব্দ থেকে। এর অর্থ হলো বন্দুকের টোটা। ঘৃণার কার্তুজ বলতে কবি বাঙালি জাতির বিস্ফোরণোন্মুখ ঘৃণার সম্মিলনকে বুঝিয়েছেন।

নীলকমলেরা জাগে - নীলকমল অর্থ নীল রঙের পদ্ম। কিন্তু কবি এখানে রূপকথার রাজকুমারদের কথা বলেছেন। আর এই রাজকুমারগণ হলেন ৭১-এর বীর মুক্তিযোদ্ধা যারা দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য দীর্ঘদিন রাত জেগে কাটিয়েছেন।

কবিতার হাতে রাইফেল- কথাটি রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। ১৯৭১ সালে বাঙালি কবিরা কবিতাকেও যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। অর্থাৎ কবিতার মাধ্যমেও প্রতিরোধ ও মুক্তির কথা বলা হয়েছে।

এবার বাঘের থাবা- মুক্তিযোদ্ধাদের শক্তিশালী আক্রমণ বোঝাতে প্রতীকটি ব্যবহার করা হয়েছে। রাতজাগা নির্বাসন শেষে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণের ফলে এদেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ ভিটেমাটি ছাড়া হন । তাঁরা দীর্ঘ নয় মাস নিজ দেশেই কিংবা প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে নির্বাসিত জীবনযাপন করতে বাধ্য হন। কিন্তু তাঁরা এ অবস্থাতেই গড়ে তোলেন প্রবল প্রতিরোধ । নির্ঘুম রাত্রিকে তারা উৎসর্গ করেন প্রিয় মাতৃভূমির মুক্তির লক্ষ্যে। এক সময় শত্রুকে পরাজিত করে তাঁরা ফিরে আসেন বীরের বেশে। আলোচ্য অংশে কবি তাঁদের গর্বিত প্রত্যাবর্তনের কথা বলেছেন ।

Content added By

কবি কামাল চৌধুরীর ‘ধূলি ও সাগর দৃশ্য' কাব্যের অন্তর্গত ‘সাহসী জননী বাংলা কবিতাটি তাঁর কবিতা সংগ্রহ গ্রন্থ থেকে সংকলন করা হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে—‘ভীতু' ও ‘ভেতো’ বলে যাদের অভিহিত করা হয়েছিল, সে মিথ্যাচার ব্যর্থ করে দিয়ে বাঙালি জাতি তাদের শৌর্যের মহিমায় জয় করে নেয় স্বাধীনতা। মুক্তির পতাকা তাদের হাতে। শত্রুর আসুরিক আচরণ, বিকট উল্লাস আর নৃশংসতা স্বল্প সময়ে পরাভূত করা সম্ভব হয় এ দেশের মানুষের মনে কাব্যময় স্নিগ্ধতার সঙ্গে সাহসের ইস্পাতদৃঢ়তা আছে বলে। অনাদি অতীতের সংগ্রাম, ভাষার জন্য রক্তদানের ইতিহাস মুক্তিযুদ্ধকালে ছিল বাঙালির প্রেরণার বাতিঘর। এদেশের জনজীবনের বিভিন্ন বাঁকে আছে প্রতিরোধ ও সংগ্রামের ঐতিহ্য। গ্রামবাংলার মানুষ সমন্বিত সংহতিতে পরাভূত করে অশুভ শক্তিকে। আসলে এসবই বাংলাজননীর প্রাণের উত্তপ্ত স্পন্দনজাত, তার মাটি থেকে উঠে আসা সাহসের ফোয়ারাস্নাত। সমস্ত বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করে এই বীর জাতি বিজয়ের পতাকা উড়িয়ে ফিরে এসেছে দেশমাতৃকার ক্রোড়ে। কবিতাটিতে দৃপ্ত উচ্চারণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অঙ্গীকার প্রতিফলিত হয়েছে।

Content added By